তথ্য ও যোগাযোগ (আইসিটি) খাতে দেশের সর্বোচ্চ কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। গতকাল সোমবার রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড-১১’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ভূমি ডিজিটালাইজেশন ও ই-গভর্নেন্স-এ দুটি ক্ষেত্রে আমরা এখনো অগ্রসর হতে পারিনি। তবে সরকারের চলতি মেয়াদে ভূমি রেকর্ড ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন অর্থমন্ত্রী।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০০৬ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নের সময় আমরা তথ্য-প্রযুক্তির দিকে বিশেষ নজর দেই। এরপর ২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর ইশতেহার ঘোষণায় আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করি। অঙ্গীকার বাস্তবায়নে আমরা শুধু বাজেট বরাদ্দই দেইনি, বিভিন্ন পর্যায়ে ডিজিটাল করার কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। দেশের সাড়ে ৪ হাজার উপজেলায় তথ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। তবে প্রয়োজনীয় রক্ষণাবেক্ষণ এবং বিদ্যুত্ সংকটের কারণে অনেক উপজেলায় এ কেন্দ্রগুলো থেকে এখনো সঠিক সেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, ই-টেন্ডারিংয়ের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্নীতি বন্ধ করা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে অনেক সময় ছাত্র নেতা ও কিছু শিক্ষক ঘুষ নিতেন বলে প্রায়ই অভিযোগ পাওয়া যেত। ই-টেন্ডারিং এবং ভর্তি প্রক্রিয়া ডিজিটাল করায় এক্ষেত্রে দুর্নীতি বন্ধ হয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। দেশে বর্তমানে ২৫ লাখ বেকার রয়েছে। এ তালিকায় প্রতিবছর আরো ১৮ লাখ নতুন মুখ যুক্ত হচ্ছে। আইসিটি খাতে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশে বেকারত্বের হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তিনি উল্লেখ করেন। ‘ডিজিটাল শিক্ষাই ডিজিটাল বাংলাদেশের ভিত্তি’—এই শ্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া বিসিএস আইসিটি ওয়ার্ল্ড-২০১১ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির (বিসিএস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। তিনি বলেন, ইতিমধ্যে অনেক ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বাদ পেতে শুরু করেছে বাংলাদেশের মানুষ। গ্রামীণ ও প্রান্তিক পর্যায়েও তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে মানুষের জীবনমান ও কর্মপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন এবং বৈচিত্র্য এসেছে। এখন আর পাসপোর্ট-ভিসার জন্য আবেদন, বিভিন্ন সরকারি সেবা গ্রহণ, স্বাস্থ্য সেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নেয়ার জন্য গ্রামের মানুষকে শহর কিংবা রাজধানীতে অর্থব্যয় করে ছুটে যেতে হয় না। ই-তথ্যসেবা কেন্দ্র থেকেই পেয়ে যায় সবকিছু। তিনি আরো জানান, দেশে তৈরি ল্যাপটপ ‘দোয়েল’ শিশুদের হাতে তুলে দিয়ে সরকার নতুন দিনের সূচনা করেছে। অচিরেই দোয়েল সবার হাতে হাতে পৌঁছানো হবে। সরকার প্রত্যাশা করে, দোয়েল হাতে পাওয়া নতুন প্রজন্মই একদিন এ দেশের মাটির ঋণ শোধ করবে।
অনুষ্ঠানে বিসিএস সভাপতি মোস্তাফা জব্বার তার স্বাগত বক্তব্যে ভূমি ব্যবস্থায় ডিজিটাল পদ্ধতি প্রবর্তন, সচিবালয়ের ডিজিটালাইজেশন, কম্পিউটার ও তথ্য প্রযুক্তি পণ্য আমদানিতে শুন্য শুল্ক ও শূন্য মূসকের ব্যবস্থা এবং বিদেশ থেকে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত আয় সহজে গ্রহণের জন্য দেশে পে-প্যাল ব্যবস্থা চালুর দাবি জানান। অনুষ্ঠানে প্রদর্শনীর প্লাটিনাম স্পন্সর বাংলালায়ন কমিউনিকেশন্সের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) আবদুল মান্নান শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, এবারের বিভিন্ন ইভেন্টে ওয়েব ফেয়ার, ইভেন্ট কর্ণার, সেলিব্রেটি শো, গুণীজন সংবর্ধনা, কুইজ প্রতিযোগিতা, প্রোডাক্ট শো, জাদু ও কৌতুক পরিবেশনাসহ আইসিটি বিষয়ক ৫টি সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। এবারের প্রদর্শনীতে ৭০টি স্টল এবং ৩০টি প্যাভিলিয়ন থাকছে। আগামী ২৫ নভেম্বর প্রদর্শনী শেষ হবে।
|